বেহুলা কি ঘরে ফিরবে? | Will Behula return home?
বা হাতে সোনার বালা, ডান হাতে সাইকেল …
বেহুলার বিয়ে হয়ে গেলো পাশের গ্রামের লখিন্দরের সঙ্গে … লখিন্দর ভারী সুপাত্র, আগে একশো দিনের কাজ করতো, ইদানিং নাকি কন্ট্রাক্টরি করে | পাত্রের বাবা, হনুমান জেনা গ্রাম পঞ্চায়েতের হোমরাচোমরা | চার বছর আগে, নিজেদের পরিবর্তন করে, যেন ভাগ্যটাই পাল্টে গেলো জেনা পরিবারের ! এখন গোলা ভরা ধান, দুখানা মাছের ভেরি, খানকয়েক ট্র্যাক্টর, হাতিশালে হাতি ঘোড়াশালে ঘোড়া (একটা টাটা 407, একটা মোটরসাইকেল) !
বেহুলার বাপ, বুদ্ধদেব গুছাইত জমিহারা কৃষক .. দুমুঠো জোগাড় করতেই সূয্যি ডুবে যায় রোজ ..মাথার ওপর একফালি ছাদ, আর ছাদের নীচে গোটা সাত খালি পেট …
বড় মেয়েটা পড়াশোনায় ভালো, মাথা নাকি চৌকস, স্কুলের দিদিমনিরা বলেন | কিন্তু টানাটানির সংসারে লেখাপড়ার বিলাসিতা বুদ্ধদেবকে চাবুকের মতো মারে | বেহুলার পরে যে আরও তিন মেয়ে ! মা ষষ্ঠী একবারও ভালো করে মুখ তুলে তাকালেন না বুদ্ধদেবের ওপর! সবই কপাল ….তার ওপর উনিশ কাঠা পৈতৃক চাষ জমিটারও পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হয়ে গেলো শহুরে বাবু-বিবিদের তরজায় …
গত বছর সরকারের তরফ থেকে একখানি সোনার বালা পেয়েছিলো বেহুলা, এবছর পেয়েছে সাইকেল আর এক-কালীন জলপানির টাকা | বুদ্ধদেব আর দেরি করলেন না .. ভগবান একটু মুখ তুলেছেন, এইবেলা সুপাত্র দেখে নিজের কন্যাদায় কিঞ্চিৎ লাঘব করতে উঠে পড়ে লাগলেন .. জমানো যা পুঁজি ছিল, নিলামে তুলে হনুমান জেনার বড় ছেলে লখিন্দরের সঙ্গে পাকা কথা সেরে ফেললেন | পাত্রপক্ষের ভারি পছন্দ হয়েছে বেহুলাকে, শুধু একটাই শর্ত ..বিয়ের পর পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দিতে হবে চিরকালের জন্য! লখিন্দর চার ক্লাসের চৌকাঠ পেরোতে পারে নি অনেক কসরত করে, অতএব বিদ্যাধরী বৌ তাদের দরকার নেই | বুদ্ধদেব হাতে চাঁদ পেলেন যেন ..পরের দিনই স্কুল থেকে বেহুলার নাম কাটিয়ে এলেন | আর তার এক মাস পরেই, আষাঢ় মাসে চার হাত এক হয়ে গেলো..
বাপের মুখে হাসি ফুটিয়ে বেহুলা চললো শশুরবাড়ি ..এক হাতে পুরস্কার পাওয়া সোনার বালা, অন্য হাতে সাইকেল ..আর জলপানির টাকা লখিন্দরের ট্যাঁকে গোঁজা …
বুদ্ধদেব এখন বিকেল বেলায় রোজ উদাস মনে উঠোনে বসে দিন গোনেন, আর কদিন বাকি কাত্তিক মাস আস্তে .. তার বেহুলা মা ঘরে ফিরবে ..
পুজো আসছে !!