skip to Main Content
জয় মা সেল্ফিশ্বরী !

জয় মা সেল্ফিশ্বরী !

জয় মা সেল্ফিশ্বরী

 

– অনির্বান দত্ত

 

ঝনঝন্ দুমদাম দুদ্দাড় .. ভোম্বলদা একতলা থেকে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতেই প্রমাদ গুনলেন .. নিশ্চই পাশের ফ্ল্যাটের সদ্য বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কুরুক্ষেত্র বেঁধেছে আবার! লাফিয়ে দু তিনটে করে সিঁড়ি একসাথে টপকে টপকে তিনতলায় পৌঁছলেন শান্তির দূতের মতন। কিন্তু তারপর পুরো বোমকে গেলেন .. আওয়াজটা পাশের ফ্ল্যাট নয়, নিজের ফ্ল্যাট থেকেই আসছে!! তাহলে কি চোর ঢুকলো নাকি এই ভরা দিনের আলোয়? পা টিপে টিপে এগিয়ে দরজার ওপর কান রাখলেন .. প্রবল ধুমধাড়াক্কার মাঝে ভেসে এলো নিজের স্ত্রীর ক্ষীণ কন্ঠস্বর, “ওরে বুল্টি, প্লিজ ওই ফুলদানিটা না .. ওটা গত বছর চৈত্র সেলে বেহালা বাজার থেকে অনেক গুঁতোগুঁতি করে ডিসকাউন্টে কেনা ..গেলো গেলো, সব গেলো ..”। একটা খানখান করে দেওয়া কর্কশ আওয়াজ, তারপর পিন পড়া নিঃস্তব্ধতা।
আর উৎকণ্ঠা চেপে রাখতে পারলেন না ভোম্বলদা। ব্যাগ থেকে মেইন দরজার ডুপ্লিকেট চাবিটা বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে লক খুললেন, তারপর আস্তে করে দরজাটা ফাঁক করতেই সাঁই করে একটা দামি সালোয়ার স্যুটের প্যাকেট কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেলো! ভ্যাবাচ্যাকা ভোম্বলদা ঘরে ঢুকে দেখলেন বসার ঘর লন্ডভন্ড, পুজোর জামাকাপড় ছড়িয়ে মেঝে জুড়ে, ডাইনিং টেবিলের এক কোনায় সহধর্মিনী প্রস্তর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে, আর রণচন্ডির মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে বুল্টি, মানে বল্টুর দিদি, অর্থাৎ কিনা ভোম্বলদার একমাত্র অষ্টাদশী কন্যা।
ভোম্বলদাকে দেখে বুল্টির মা যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। দাঁত কিড়মিড় করে ঘোষণা করলেন, “আদর দিয়ে মেয়েকে বাদর করেছো, এবার তুমিই সংসার সামলাও, আমি চললাম।” এ যেন KBC-র শেষ প্রশ্নের চেয়েও কঠিন ধাঁধা .. ভোম্বলদা কিছুই বুঝতে না পেরে প্রসেনজিৎ, ইয়ে মানে, বুল্টির দিকে অসহায় আত্মসমর্পণ করে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে, দেব আজ কলেজ ছুটির পর বাড়ি অব্দি ড্রপ করে দেয় নি বুঝি?”
যেন আগুনে ঘি পড়লো .. গর্জন করে উঠলো ফেসবুকে ২৫০০ ফলোয়ার এবং কলকাতার প্রায় ৩৪৮৭টি তরুণ তুর্কিকে সকাল বিকেল পিংপং বলের মতো নাচানো তন্বী .. “দেব মাই ফুট, আই হ্যাভ গট মোর সিরিয়াস প্রব্লেমস ইন মাই লাইফ। ক্যান ইউ ইম্যাজিন, আজ বিকেলে এবিপি নিরানন্দর লাইভ আপডেট পেলাম, কর্তৃপক্ষের আদেশ প্যান্ডেলে নাকি সেলফি তোলা যাবে না এবছর, অমান্য করলে ফাইন দিতে হবে, মোবাইল সিজ হবে! হোয়াট বুলশিট, আমার পুজোটাই ভেস্তে দিলো .. সব ডিজাইনার ড্রেসগুলো ইউসলেস হয়ে গেলো! একটাও সেলফি তুলতে পারবো না উইথ কার্তিক ইন দা ব্যাকড্রপ .. নোবডি উইল গো বনকার্স সিইং মাই পাউট .. জাস্ট ইনকরিজিবল ” .. বলতে বলতেই আবার ধড়াম .. কৃষ্ণনগর থেকে কেনা মাটির রবীন্দ্রনাথ ভেঙে চুড়মার! কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভোম্বলদা সিলিং পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “রবিঠাকুর ভেঙে দিলেও, ক্যাবিনেটে মিকা সিং-এর সিডিটা অক্ষত রেখেছে .. যাতে মাতাল, তালে ঠিক ? .. জয় মা সেল্ফিশ্বরী ? ” ..
পুজো আসছে !!

This Post Has 0 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top