অষ্টমীর গপ্পো | The Story of Ashtami

অঞ্জলী দিতে গিয়ে দেখি রণেন কাকা মণ্ডপের এক কোণে বসে আছেন চুপটি করে ..
“কাকা, অঞ্জলী দেবেন না ?”
“বাবা, সমাজ আমার জ্ঞান চক্ষু খুলে দেওয়ার পর থেকে আর অঞ্জলী দিই না | যখন অবোধ ছিলাম, দিতাম .. আমি মনে মনেই আমার প্রার্থনা জানিয়ে দিই বাবা, এতো আড়ম্বরের দরকার পরে না |”
“কী যে বলেন কাকা, মহা অষ্টমীর অঞ্জলী দিলে কত পুণ্যার্জন হয় !”
কাকা স্মিত হেসে আমাকে বললেন, “ওই দ্যাখো … খগেনদা অঞ্জলী দেওয়ার জন্য কেমন ওই দুগ্ধপোষ্য শিশুটিকে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে সাইড করে নিজে সামনের সারি-তে এগিয়ে গেলেন | ইওর ভার্চু ইজ ডাইরেক্টলি প্রপোর্শনাল টু ইওর প্রক্সিমিটি টু দি দূর্গা আইডল, এই থিওরেমটা যে কে লিখেছিলেন ! ওই দ্যাখো, অনিমা বৌদির টিপ্ করে ছোড়া ফুল সামনের মহিলার খোঁপায় লেগে কক্ষচ্যুত হল বলে ওনার কি রাগ, পারলে চোখের থেকে নির্গত ইনফ্রা রেড রশ্মি দিয়ে মহিলাকে ভষ্যিভূত করে দেন |
আরও দেখবে বাবা ? ওই দ্যাখো, সন্তোষের বৌ কেমন গদগদ হয়ে ঠাকুরমশাইয়ের প্রনামীর থালায় একশো এক টাকা দিলো | কিন্তু ওই রুগ্ন, শুকনো মুখ লোকটা সেই কখন থেকে ওকে এক শিশি আচার কেনার অনুরোধ করছিলো, তাকে কেমন অর্গানাইজারদের দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ালো ! একটাও আচার বিক্রি না হলে ওর ঘরে আজ হয়তো ভাত চড়বে না, অথচ ধূর্ত পুরোহিতের থালায় গান্ধীজি হেসেই চলেছে |
ওই দ্যাখো, অমল কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে অঞ্জলী দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পাশে দাঁড়ানো সুন্দরীটিকে গিলে খাচ্ছে ! পুজো শেষ করেই ধাওয়া করবে |
বুঝলে বাবা, আমি প্রতিবছর অষ্টমীতে এই চেয়ারটায় বসে সমাজ কে দেখি, ভারী পরিষ্কার দেখা যায় এখান থেকে .. পাপ আর পুণ্য যেন প্রফিট এন্ড লস একাউন্ট | অঞ্জলী দিয়ে পুণ্যি কামিয়েই মাঠে নেমে পড়ি সেই ব্যালান্স খরচ করার জন্য |”
রণেন কাকার ভাষণকে পিছনে রেখে দৌড়লাম ..লাস্ট ব্যাচের অঞ্জলী চলছে | নমো নমো করে অঞ্জলীটা শেষ করেই ছুটতে হবে, এদিকে পেটে ছুঁচো লাফাচ্ছে আর ওদিকে বাড়িতে গরম গরম লুচি আলুরদম জিলিপি | দুপুরে কষা মাংস, রাতে একটু কারণ বারি .. সব অপেক্ষা করে রয়েছে | পাপ পুণ্যের কথাটা কেমন যেন মাথা থেকে হাওয়াই হয়ে গেলো !!